সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক হাজার ২০১টি ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আদালত। আর ১৯টি এখনো নির্মাণাধীন রয়েছে। গতকাল সরকারের পক্ষ থেকে এই তথ্য বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।

গত ১৩ই নভেম্বর মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করীম ধোলাইখালের নিকটে গেন্ডারিয়া নামক স্থানে তার নসিহত শুনতে আসা সাধারণ মুসলমানদের হাত উঁচু করে শপথ পড়িয়ে নেন যে, ‘আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব, জেহাদ করব। রক্ত দিতে চাই না, দেয়া শুরু করলে বন্ধ করব না। রাশিয়ার লেলিনের বাহাত্তর ফুট মূর্তি যদি ক্রেন দিয়ে তুলে সাগরে নিক্ষেপ করতে পারে তাহলে আমি মনে করি শেখ সাহেবের এই মূর্তি আজ হোক, কাল হোক খুলে বুড়িগঙ্গায় নিক্ষেপ করবে। অন্যদিকে হেফাজতের ইসলামের নেতা ও খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল হক রাজধানীর তোপখানা রোডের বিএমএ ভবনের মিলনায়তনে বলেছিলেন, ‘যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন করে তারা বঙ্গবন্ধুর সুসন্তান হতে পারে না। এই মূর্তি স্থাপন বন্ধ করুন। যদি আমাদের আবেদন মানা না হয়, আবারও তৌহিদী জনতা নিয়ে শাপলা চত্বর কায়েম হবে।’
এরপর অনলাইন, অফলাইনে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এর কয়েকদিন পর কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবের নির্মাণাধীন এক ভাস্কর্য দুইজন মিলে ভাংচুর চালায়। এখানে বলে রাখা ভাল মামুনুল হক হলেন মুহাদ্দিস, ইসলামী ঐক্য জোটের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস অভিভাবক পরিষদের চেয়ারম্যান, ইসলামী চিন্তাবিদ আজিজুল হকের সন্তান। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০০৮ (২৯ ডিসেম্বর ২০০৮) এর আগে আওয়ামী লীগ খেলাফতে মজলিসের সাথে একটা চুক্তি করে। চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয় হল- তারা কোরান, সুন্নাহ ও শরীয়া বিরোধী কোন কিছু করবে না এবং নবী ও সাহাবীদের কেউ সমালোচনা করলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে এমন আইন তারা করবে। এছাড়া ২ মার্চ ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা বলেছেন- ‘মদিনা সনদ ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজের ভাষণের নির্দেশনা অনুসারে দেশ চলবে। এই সরকার পবিত্র কোরআন এবং সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন পাস করবে না।’।
মজার বিষয় হল আওয়ামী লীগের সাথে স্বার্থের কারণে যখন ইসলামপন্থী দলগুলোর কোন ঝামেলা হয় তখন এসব দল মৌলবাদী দলে পরিণত হয়, কেউ কেউ আবার রাজাকার হয়ে যায়। যেমন, হেফাজতের শফিপন্থীদের সাথে সরকারের একটা অলিখিত চুক্তি ছিল। কিন্তু শফিপন্থীরা যখন হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ থেকে ছিটকে পড়ল এবং সরকারের সাথে আগের মতন আন্তরিকতা দেখাচ্ছে না তখন প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয় হেফাজতকে রাজাকার বলে গালি দিলেন। আদরের প্রেমিক যখন ছেড়ে চলে যায় তখন মানুষ তাকেও নটী বলে গালি দেয়। আওয়ামী লীগের এখন এই অবস্থা।
সারা দেশে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণ শুধু মুজিব বর্ষ উদযাপনই নয়, এটি লীগের একনায়কতন্ত্র প্রদর্শনও বটে। ধর্মবাদীরা তাদের ধর্মীয় চিন্তা থেকে ভাস্কর্য নির্মাণ করছে। কিন্তু যারা ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে না তারা নিশ্চয়ই সারা দেশে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য নির্মাণের পক্ষেও নন। যদিও বাংলাদেশের বেশির ভাগ ভাস্কর্য দেখতে উদ্ভট ও কদাকার। এই ভাস্কর্য নির্মাণের অজুহাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হচ্ছে। এর জন্যে সবগুলো ভাস্কর্য ও বাজেটের দিকে তাকালেই আন্দাজ করা সম্ভব। যমুনা টিভি ইনভেস্টিগেশন ৩৬০ ডিগ্রি’তে “বােবা ভাস্কর্যের গল্প” নামে একটি পর্ব করেছে। সেখানে তারা দেখিয়েছে কীভাবে রাঙ্গামাটির একটি ভাস্কর্য বানাতে প্রায় দুই কোটি টাকা লুটপাট চালানো হচ্ছে, পরবর্তীতে আরো কয়েক কোটি টাকা সেই প্রোজেক্টে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে শেখ মুজিবের ভাস্কর্যের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে দেওয়া হচ্ছে অথচ এই রাষ্ট্রের জনগণ মাসে ১০ হাজার টাকা ইনকাম করতে হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পর্যাপ্ত বেড পর্যন্ত নেই। তাই জেলায় জেলায় জনগণের অর্থে কোটি টাকার ভাস্কর্য নির্মাণ এক ধরণের তামাশা। ক্ষমতার পট পরিবর্তনে এসব ভাস্কর্য ভাঙতে মৌলবাদী বা ধর্মবাদীদের প্রয়োজন হবে না, যে ছেলে কলেজ ফি দিতে না পেরে কলেজে যেতে পারে নাই তারাই এসব ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলবে। শুনতে খুব খারাপ শোনা গেলেও এটাই বাস্তব।
জার্মানি, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেনে অনেক চমৎকার ভাস্কর্য দেখার সুযোগ হয়েছে। তাদের ভাস্কর্য দেখলে আপনি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবেন। কিন্তু বাংলাদেশে ভাস্কর্যের নামে যেসব কিম্ভুতকিমাকার জিনিস বানানো হচ্ছে তা সত্যি দুঃখজনক। জনগণের অর্থ নষ্ট করে এসব ভাস্কর্য বানিয়ে আবার গর্ব করে প্রদর্শন করাও হচ্ছে। নিচে তার দুই একটা নমুনা দেওয়া হল।।